📚 ঈ শিরোনামের বইয়ের অমূল্য সংকলন: ঈমান ও উৎসবের বিশুদ্ধ জ্ঞান
ঈমান, ঈদ এবং নবী ঈসা (আঃ) সম্পর্কিত ২৭টি নির্বাচিত বইয়ের সমাহার

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ! প্রিয় পাঠকবৃন্দ, ইসলামী জ্ঞানের গভীর সমুদ্রে আপনাদেরকে স্বাগতম। এই পোস্টে আমরা সংকলন করেছি ঈ শিরোনামের ২৭টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী বই। এই নির্বাচিত গ্রন্থসমূহ প্রধানত তিনটি মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে: ঈমান বা বিশ্বাস, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার বিধান, এবং নবী ঈসা (আঃ) সংক্রান্ত সঠিক আকীদা। এই সংকলনটি আপনাকে ইসলামের মূলভিত্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে এবং সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা বা বিদ’আত থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ। জ্ঞানার্জনের এই ইলমী সফরে আমরা আপনাকে পাশে চাই।
১. ঈমানের মৌলিকত্ব: বিশ্বাস এবং জীবনবোধ
ইসলামের মূলভিত্তি হলো ঈমান। আমাদের এই সংকলনের সিংহভাগ বই এই ঈমানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। ‘ঈমান ইসলামের মূলভিত্তি ও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস’ বইটি বিশ্বাসের প্রাথমিক ধারণা দেয়, যেখানে ‘ঈমানের মূলনীতি সমূহের ব্যাখ্যা’ বা ‘ঈমানের মৌলিক নীতিমালা সংক্রান্ত মণিমুক্তা’ গ্রন্থগুলো আপনাকে ঈমানের গভীরতর তত্ত্ব ও খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবহিত করে। একজন মুসলিম হিসেবে ঈমানের ছয়টি রুকন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অপরিহার্য, যা ‘ঈমানের রুকন সমূহ’ এবং ‘ঈমানের স্তম্ভ সূমহ’-এর মতো বইগুলোতে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ঈমান কেবল মুখে স্বীকৃতির নাম নয়, বরং তা অন্তরে বিশ্বাস, মুখে উচ্চারণ এবং কর্মে বাস্তবায়ন। সহীহ কিতাবগুলো পাঠ করে এই ঈমানকে কর্মে প্রতিফলিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
ঈমানের বিপরীত ধারণা বা ঈমান নষ্টকারী বিষয়গুলো জানা ঈমানের সংরক্ষণের জন্য খুবই জরুরি। ‘ঈমানের দূর্বলতা’ বইটি আমাদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। অন্যদিকে, ‘ঈমানের ৭৭ টি শাখা’ গ্রন্থটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ঈমানের পূর্ণতা কেবল বিশ্বাসের মধ্যে নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ভালো কাজে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। ‘ঈমান ও ইসলাম’ এবং ‘ঈমানের হাকীকত’ এর মতো বইগুলো এই মৌলিক বিশ্বাসের স্বরূপ উন্মোচন করে, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
২. বস্তুবাদের সংঘাত ও মুমিনের পরিচয়
আধুনিক বস্তুবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত মানুষের ঈমানের ওপর আঘাত হানছে। ‘ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত’ বইটি বৈষয়িক চিন্তাধারার মোকাবেলায় ঈমানের শক্তিকে তুলে ধরে। এটি আমাদের শেখায় যে পার্থিব লোভ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে ঈমানকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। ঈমানী জীবন কেমন হওয়া উচিত, তার ছবি ফুটে ওঠে ‘ঈমান যখন জাগলো’ এবং ‘ঈমানদীপ্ত কিশোর কাহিনী’-এর মতো বইগুলোতে। একজন মুমিনের পরিচয় কী? তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কী? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ‘ঈমানের দাবী’ এবং ‘ঈমানের দাবী মুমিনের পরিচয়’-এর মতো গ্রন্থসমূহে। এই বইগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈমান কেবল ব্যক্তিগত মুক্তির জন্য নয়, বরং তা সামাজিক দায়িত্ব পালনেরও প্রেরণা দেয়।
“বল, ‘আল্লাহ! অতঃপর তাদেরকে তাদের নিরর্থক আলোচনায় ব্যাপৃত থাকতে দাও।’ (সূরা আন’আম: ৯১)। ঈমান আমাদেরকে জীবনের লক্ষ্য ভুলিয়ে দেওয়া বস্তুবাদী জগত থেকে রক্ষা করে।”
৩. ঈদ ও উৎসবের বিধান: বিশুদ্ধ সুন্নাহর অনুসরণ
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা মুসলমানদের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু এই উৎসব পালনের ক্ষেত্রেও আমাদের অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। ‘ঈদুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত বিধি বিধান’ বইটি ঈদের সালাত, ফিতরা এবং ঈদের অন্যান্য আমল সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দেয়। ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়ার গুরুত্ব ও তার বিধান কী হওয়া উচিত, তা ‘ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়তে হবে কেন’ বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে সমাজে যে মতপার্থক্য দেখা যায়, তার সমাধান পাওয়া যায় ‘ঈদের সালাতে বারো তাকবীরের প্রমাণ ও ছয় তাকবীরের বিশ্লেষণ’-এর মতো গবেষণামূলক গ্রন্থে। মুযাফফার বিন মুহসিন রচিত ‘ঈদের তাকদীর’ বইটি ঈদের বিভিন্ন দিক ও আমল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্যালোচনা:
ঈদ সম্পর্কিত আলোচনার পাশাপাশি আরেকটি বহুল প্রচলিত উৎসব হলো ‘ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী’। ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) রচিত ‘ঈদ ই মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তকঃ একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা’ বইটি অত্যন্ত প্রামাণ্য দলিল ও গবেষণার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের উৎপত্তি এবং ইসলামী শরীয়তে এর অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। এটি পাঠককে সঠিক সুন্নাহভিত্তিক আমলের দিকে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করবে।
৪. নবী ঈসা (আঃ) এর সঠিক পরিচিতি
নবী ঈসা (আঃ) ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল। তবে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাঁর সঠিক পরিচিতি তুলে ধরে ‘ঈসা মসীহ ইসলামের এক নবী’ বইটি। এটি ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর একজন সম্মানিত বান্দা ও রাসূল হিসেবে উপস্থাপন করে। অন্যদিকে, ‘ঈসা আঃ বান্দাহ না প্রভু’-এর মতো গ্রন্থগুলো প্রামাণ্য দলিলসহ প্রমাণ করে যে, তিনি আল্লাহর সৃষ্ট একজন মানুষ ও তাঁর প্রেরিত নবী, কোনোভাবেই তিনি ইলাহ বা প্রভু নন। এই বইগুলো পাঠ করলে খ্রিস্টান ধর্মসহ অন্যান্য ভ্রান্ত ধারণার বিপরীতে ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়, যা আন্তঃধর্মীয় সংলাপেও সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার: ঈমানী মৃত্যুর প্রস্তুতি
জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং প্রতিটি মুমিনের চূড়ান্ত চাওয়া হলো ‘ঈমানী মৃত্যু’। এই সংকলনের বইগুলো আমাদেরকে সেই পথের পাথেয় যোগাতে সাহায্য করবে। ঈমানকে মজবুত করে, বস্তুবাদের সংঘাত এড়িয়ে, সুন্নাহর আলোকে জীবন যাপন করে এবং সকল নবীর প্রতি সঠিক বিশ্বাস রেখে আমরা যেন সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারি— সেই তৌফিক আল্লাহর কাছে কামনা করি। ‘ঈমান থাকলেই বেহেশত পাওয়া যাবে’ এই সরল সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে ঈমানকে বিশুদ্ধ রাখতে হবে, যার পথ এই কিতাবগুলো বাতলে দেয়।
আমরা আশা করি, এই সংকলনটি আপনার ইলমী সফরকে আরও ফলপ্রসূ করবে। আল্লাহ আমাদের সকলের প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমিন।
👇 বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন 👇
১। ঈদ ই মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তকঃ একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা — ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
২। ঈদুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত বিধি বিধান — গবেষণা বিভাগ দুরারুস সানিয়্য ফাউন্ডেশন
৩। ঈদের তাকদীর — মুযাফফার বিন মুহসিন
৪। ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়তে হবে কেন — নাসেরুদ্দিন আল আলবানী
৫। ঈদের সালাতে বারো তাকবীরের প্রমাণ ও ছয় তাকবীরের বিশ্লেষণ — আব্দুর রহমান মুবারকপুরী
৬। ঈমান ইসলামের মূলভিত্তি ও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস — মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু
৭। ঈমান ও ইসলাম — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৮। ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত — আবুল হাসান আলী নাদভী
৯। ঈমান থাকলেই বেহেশত পাওয়া যাবে — মোঃ মতিয়ার রহমান
১০। ঈমান যখন জাগলো — আবুল হাসান আলী নাদভী
১১। ঈমান সবার আগে — মুহাম্মদ আবদুল মালেক
১২। ঈমানদীপ্ত কিশোর কাহিনী — আবুল হাসান আলী নাদভী
১৩। ঈমানী মৃত্যু — ফখরুদ্দীন আহমাদ
১৪। ঈমানের ৭৭ টি শাখা — ইমাম বায়হাকী
১৫। ঈমানের অগ্নিপরিক্ষা — দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
১৬। ঈমানের দাবী — আব্বাস আলী খান
১৭। ঈমানের দাবী — আবুল হাসান আলী নাদভী
১৮। ঈমানের দাবী মুমিনের পরিচয় — খন্দকার আবুল খায়ের
১৯। ঈমানের দূর্বলতা — সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
২০। ঈমানের মূলনীতি সমূহের ব্যাখ্যা — মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
২১। ঈমানের মৌলিক নীতিমালা সংক্রান্ত মণিমুক্তা — মুহাম্মাদ ইয়োসরী ইবরাহীম
২২। ঈমানের মৌলিক বিষয় সমূহঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে — বিশিষ্ট ওলামাবর্গ
২৩। ঈমানের রুকন সমূহ — ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা মুনাওয়রা
২৪। ঈমানের স্তম্ভ সূমহ — ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা মুনাওয়রা
২৫। ঈমানের হাকীকত — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
২৬। ঈসা আঃ বান্দাহ না প্রভু — ড. মুহাম্মদ তাকিউদ্দীন হেলালী
২৭। ঈসা মসীহ ইসলামের এক নবী — মুহাম্মদ আতাউর রহীম



