ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বই: Islamic literature and culture pdf books

ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অধ্যয়ন ও জ্ঞান সাধনা – আবু বকর সিরাজী
২। অনল প্রবাহ – সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী
৩। অপসংস্কৃতির বিভীষিকা – জহুরী
৪। আমাদের সংস্কৃতি বিচার্য বিষয় ও চ্যালেঞ্জসমূহ – জয়নুল আবেদীন মজুমদার
৫। আমি বারোমাস তোমায় ভালোবাসি – মাসুদা সুলতানা রুমি
৬। আরবি সাহিত্যে ইসলামী ভাবধারা – ইফতিখারুল আলম মাসউদ
৭। আসমানি আদালত – মাহমুদ শিত খাত্তাব
৮। আসরারে খূদী – মুহাম্মদ ইকবাল
৯। ইসলাম ও শিল্পকলা – ইউসুফ আল কারযাভী
১০। ইসলামী শিক্ষ ও সংস্কৃতি – এ কে এম নাজির আহমদ
১১। ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি – এ কে এম নাজির আহমদ
১২। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – মুহাম্মদ আবদুর রব
১৩। ইসলামী শিক্ষা সিরিজ – ড. জামাল আল বাদাবী
১৪। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রুপরেখা
১৫। ইসলামী শিক্ষার মূলনীতি – খুরশীদ আহমদ
১৬। ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি – আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার ও আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
১৭। ইসলামী সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্ত্য সভ্যতা – অধ্যাপক গোলাম আযম
১৮। ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৯। ইসলামী সাধারণ জ্ঞান – ড. মুহাম্মাদ নজরুল ইসলাম খান
২০। ইসলামী সাহিত্য মূল্যবোধ ও উপাদান – আবদুল মান্নান তালিব
২১। ইসলামে গান, ছবি ও প্রতিকৃতির বিধান – মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু
২২। ইসলামের দৃষ্টিতে গান বাজনা – মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মুমিন
২৩। কবে আসবে সেই শুভদিন – মাসুদা সুলতানা রুমী
২৪। কিছু সত্য বাচন – মাসুদা সুলতানা রুমী
২৫। কুরআনের শিক্ষা সংস্কৃতি – আবদুল মতীন জালালাবাদী
২৬। গান-বাজনার ব্যাপারে ইসলামের হুকুম – আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
২৭। চরমনের পীর সাহেব আমাকে জামায়াতে ইসলামিতে নিয়ে এলেন – মাসুদা সুলতানা রুমী
২৮। চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণঃ ইসলামি দৃষ্টিকোণ – যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক
২৯। ছবি ও মূর্তি – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
৩০। নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে আমার পরিচয় – মাসুদা সুলতানা রুমী
৩১। নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুশকিলের সাথে আসানীও রয়েছে – মাসুদা সুলতানা রুমী
৩২। প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান – দীনেশচন্দ্র সেন
৩৩। বাঙলা সাহিত্যের রুপরেখা – গোপাল হালদার
৩৪। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মুসলিম অবদান – মোশারাফ হোসেন খান
৩৫। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য – মুহাম্মদ মতিউর রহমান
৩৬। বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত – মুহাম্মদ আব্দুল হাই ও সৈয়দ আলি আহসান
৩৭। বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা – গোপাল হালদার
৩৮। ভালোবাসা পেতে হলে – মাসুদা সুলতানা রুমী
৩৯। মল্লিক সেতো গানের পাখি – মোঃ আতিয়ার রহমান
৪০। মল্লিকের গান – সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী
৪১। মসনবী শরীফ – জালাল উদ্দিন রুমী রহঃ
৪১। মসনবীয়ে রুমী – জালাল উদ্দিন রুমী রহঃ
৪২। মহিমান্বিত তিনটি রাত – মাসুদা সুলতানা রুমী
৪৩। মুসলিম নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস – আলী আকবর
৪৪। মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য – আনিসুজ্জামান
৪৫। মুসলিম মানসে সংকট – আবদুল হামিদ আহমদ আবু সুলাইমান
৪৬। মুসলিম যুবসমাজের ক্যারিয়ার গঠন ও দক্ষতা উন্নয়ন – আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুস
৪৭। মুসলিম লিপিকলা উৎপত্তি ও বিকাশ – ড. আহমদ আলী
৪৮। মুসলিম সঙ্গীত চর্চার সোনালী ইতিহাস – এ জেড এম শামসুল আলম
৪৯। শাফায়াত মিলবে কি – মাসুদা সুলতানা রুমী
৫০। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সেমিনার স্মারক ২০০৪ – আই সি এস প্রকাশনী
৫১। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি – আবদুস শহীদ নাসিম
৫২। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি – মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
৫৩। শিল্প সংস্কৃতি সভ্যতা – ইব্রাহীম মন্ডল
৫৪। সমাজ – সংস্কৃত ও সাহিত্য – ড. হাসান জামান
৫৫। সংস্কৃতির তিন নকিব – মোশারাফ হোসেন খান
৫৬। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও প্রতিরোধ – আরিফুল হক
৫৭। সাহিত্যে রাজনীতির প্রভাব – ইমরান মাহমুদ
৫৮। সুর সঞ্চারী – আমিরুল মোমেনিন মানিক

ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিচিতি

পাশ্চাত্য লেখকগন এবং তাঁদের প্রভাবাধীন প্রাচ্যপণ্ডিতদেরও একটি বিরাট দল এইধারণা পোষণ করে থাকে যে, ইসলামী সংস্কৃতি তার পূর্ববর্তী সংস্কৃতিসমূহ, বিশেষত গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত এবং যেহেতু আরবীয় মানস এই পুরনো উপাদান গুলোকে এক নতুন ভঙ্গিতে বিন্যস্ত করে এর বহিরাকৃতিকে বদলে দিয়েছে, এজন্যই এ এক স্বতন্ত্র সংস্কৃতির রুপ পরিগ্রহ করেছে। এহেন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এই শ্রেনীর লোকেরা পারসিক, বেবিলনীয়, সারমেনীয়, ফিরিসীয়, মিশরীয় এবং গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির ভেতর ইসলামী সংস্কৃতির উপাদান তালাশ করে থাকে। অতঃপর যে মানসিকতা এই সংস্কৃতিগুলো থেকে আপন সুবিধামত মাল-মশলা নিয়ে তাকে নিজস্ব ভংগিতে বিন্যস্ত করে নিয়েছে, আরবীয় প্রকৃতিতে সেই মানসিকতার উপাদান খুঁজে বেড়ায়।

ভুল ধারণাঃ কিন্ত এ এক মারাত্মক রকমের ভুল ধারণা। কারণ, একথা যদিও সত্য যে, মানুষের বর্তমানকাল চিরদিনই অতীতকাল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে এবং সেহেতু প্রত্যেক নবরুপায়নেই পূর্ববর্তী গঠন উপাদান থেকে সাহায্য গ্রহন করা হয়। তথাপি একথা অনস্বীকার্য যে, ইসলামী সংস্কৃতি আপন প্রাণসত্তা ও মৌলিক উপাদানের দিক থেকেই সম্পূর্ণরুপে ইসলামী এবং এর ওপর কোন অনৈসলামী সংস্কৃতির অণুমাত্রও প্রভাব নেই। অবশ্য এর বাইরের খুটিনাটি বিষয়ে আরবীয় মনন, আরবীয় ঐতিহ্য এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংস্কৃতিগুলোর কিছু না কিছু প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। ইমারতের একটা দিক হচ্ছে তার নক্সা, তার নির্মাণকৌশল, উদ্দেশ্য মোতাবেক তার গড়ে ওঠা; এটিই হচ্ছে তার আসল ও মূল জিনিস। আর একটি দিক হচ্ছে তার বর্ণ, বৈচিত্র, তার কারুকার্য এবং তারশোভা-সৌন্দর্য, এটি হচ্ছে তার খুঁটিনাটি ও ছোট-খাট ব্যাপার। সুতরাং সংস্কৃতিসৌধ সম্পূর্ণতঃ জিনিসের দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, ইসলামী সংস্কৃতি সৌধ সম্পূর্ণতঃ ইসলামের গঠনক্রিয়ার ফল। তার নক্সা তার নিজস্ব। অন্য কোন নক্সা থেকে এব্যাপারে সাহায্য নেয়া হয়নি। তার নির্মাণ কৌশল তার নিজেরই উদ্ভাবিত, এক্ষেত্রে অপর কোন নমুনার অনুকরণ করা হয়নি। তার নির্মাণ উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও অভিনব; উদ্দেশ্যে। আর কোন ইমারত না এর আগে নির্মাণ হয়েছে, নাপরে।

অনুরুপভাবেই এ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যে যে ধরনের গঠনকার্যের প্রয়োজন ছিল, ইসলামী সংস্কৃতি ঠিক সেই রুপেই রুপায়িত হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে সে যা কিছু নির্মাণ করেছে, তাতে বাইরের কোন প্রকৌশলী না কোন সংস্কার-সংশোধনের ক্ষমতা রাখে, আর না রাখে কোন সংযোজনের। বাকী থাকে খুঁটিনাটি ও ছোটখাট বিষয়গুলো;

এ ব্যাপারেও ইসলাম অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে খুব কম জিনিসই গ্রহণ করেছে। এমন কি বলা যেতে পারে যে, এরও বেশীরভাগ ইসলামেরই নিজস্ব জিনিস। অবশ্য মুসলমানরা অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে বর্ণ, বৈচিত্র, কারুকার্য এবং শোভাসৌন্দর্যের উপকরন নিয়ে এদিককার সমৃদ্ধি কিছুটা বাড়িয়েছে। আর এটাই দর্শকদের চোখে এতখানি প্রকট হয়ে ওঠেছে যে, গোটা ইমারতের ওপরই তারা অনুকরণের অপবাদ চাপিয়ে দেবার প্রয়াস পাচ্ছে।

সংস্কৃতির সংজ্ঞাঃ এ বিষয়ের মীমাংসা করতে হলে সবার আগেই প্রশ্নের জবাব পেতে হবে যে, সংস্কৃতি কাকে বলে? লোকেরা মনে করে যে, সংস্কৃতি বলতে বুঝায় কোন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, শিল্প-কারিগরী, ললিতকলা, সামাজিকরীতি, জীবনপদ্বতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এগুলো সংস্কৃতির আসল প্রানবস্তু নয়, তার ফলাফল ও বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সংস্কৃতি বৃক্ষের মূলও নয় কাণ্ড নয়, তার শাখা-প্রশাখা ও পত্র-পল্লব মাত্র। এসব বাহ্যিক লক্ষণ ও খোলসের ভিত্তিতে কোন সংস্কৃতির মূল্যমান নির্ধারিত করা যায় না। তাই এগুলো বাদ দিয়ে আমাদেরকে সংস্কৃতির প্রাণবস্তু অবধি পৌছা দরকার, তার মূলভিত্তি ও মৌলিক উপাদান গুলো তালাশ করা প্রয়োজন।

সংস্কৃতির মৌলিক উপাদানঃ এই দৃষ্টিতে কোন সংস্কৃতির ভেতর সর্বপ্রথম যে জিনিসটি তালাশ করা দরকার তা হচ্ছে এই যে, দুনিয়াবী জীবন সম্পর্কে তার ধারণা কি? এই দুনিয়ায় সে মানুষকে কি মর্যাদা প্রদান করে? তার দৃষ্টিতে দুনিয়া বস্তুটা কি? এই দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক কি? মানুষ এ দুনিয়াকে ভোগ-ব্যবহার করবে কিভাবে? বস্তুত জীবনের তামাম ক্রিয়া-কান্ডের ওপরেই এগুলো গভীরভাবে প্রভাবশীল হয়ে থাকে। এই দর্শন বদলে গেলে সংস্কৃতির গোটা স্বরূপ মূলগতভাবেই বদলে যায়।

জীবন দর্শনের সাথে দ্বিতীয় যে প্রশ্ন গভীরভাবে সম্পৃক্ত, তা হচ্ছে জীবনের চরম লক্ষ্য। দুনিয়ার মানবজীবনের উদ্দেশ্য কি? মানুষের এতো ব্যবস্থা, এতো প্রয়াস-প্রচেষ্টা, এতো শ্রম-মেহনত, এতো দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম কিসের জন্য? কোন অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে মানুষের ছুটে চলা উচিত? কোন লক্ষ্যস্থলে পৌছার জন্য আদম সন্তানের চেষ্টা-সাধনা করা কর্তব্য? কোন পরিণতির কথা মানুষের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি প্রয়াস-প্রচেষ্টা স্মরণ রাখা উচিত? বস্তুত এই লক্ষ্য ও আকাংখার প্রশ্নই মানুষের বাস্তব জীবনের গতিধারাকে নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত করে থাকে আর তার অনুরুপ কর্মপদ্বতি ও কামিয়াবীর পন্থা জীবনের অবলম্বিত হয়ে থাকে।

তৃতীয় প্রশ্ন এই যে, আলোচ্য সংস্কৃতিতে কোন বুনিয়াদী ও ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে মানবীয় চরিত্র গঠন করা হয়? মানুষের মন-মানসিকতাকে ছাঁচে ঢালাই করে? মানুষের মন ও মস্তিস্কে কি ধরনের চিন্তা সৃষ্টি করে? এবং তার ভেতর এমন কি কার্যকর শক্তি রয়েছে, যা তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে এক বিশেষ ধরনের বাস্তব জীবন ধারণার জন্য উদ্বুদ্ধ করে? এ ব্যাপারে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই যে, মানুষের কর্মশক্তি তার চিন্তাশক্তিরই প্রভাবাধীন। যে চেতনা তার হাত ও পা-কে ক্রিয়াশীল করে তোলে, তা আসে তার মন ও মস্তিস্ক থেকে। আর যে আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, তার মন ও মস্তিষ্কে চেপে বসবে, তার গোটা কর্মশক্তি ঠিক তারই প্রভাবাধীনে সক্রিয় হয়ে ওঠবে। অন্য কথায় তার মন-মানস যে ছাঁচে গড়ে ওঠবে, তার ভেতর আবেগ-অনুভুতি ও ইচ্ছা স্পৃহা ও ঠিক তেমনি পয়দা হবে এবং তারই আজ্ঞাধীনে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করতে থাকবে। বস্তুত দুনিয়ার কোন সংস্কৃতিই একটি মৌলিক আকীদা এবং একটি বুনিয়াদী চিন্তাধারা ছাড়া প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনা। এ হিসেবে যেকোন সংস্কৃতিকে বুঝতে এবং তাঁর মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমত তাঁর আকীদা ও চিন্তাধারাকে বুঝে তার উৎকর্ষ-অপকর্ষ পরিমাপ করা প্রয়োজন – যেমন কোন ইমারতের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের কথা জানতে হলে তার ভিত্তির গভীরতা ও দৃঢ়তার কথা জানা আবশ্যক।

চতুর্থ প্রশ্ন এই যে, আলোচ্য সংস্কৃতি মানুষকে একজন মানুষ হিসেবে কি ধরনের মানুষ রুপে গড়ে তোলে? অর্থাৎ কি ধরনের নৈতিক ট্রেনিং- এর সাহায্যে সে মানুষকে তার নিজস্ব আদর্শ মোতাবেক স্বার্থক জীবন যাপনের জন্য তৈরি করে? কোন ধরনের স্বভাব-প্রকৃতি, গুনরাজি ও মন-মানস সে মানুষের মধ্যে পয়দা করে এবং তার বিকাশ বৃ্দ্ধির চেষ্টা করে? তার বিশেষ নৈতিক তালিম- এর সাহায্যে মানুষ কি ধরনের পরিণত হয়? সংস্কৃতির আসল উদ্দেশ্য যদিও সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন, কিন্তু ব্যক্তির উপাদান দিয়েই সে সমাজ সৌধনির্মিত হয়। আর সে সৌধটির দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার প্রতিটি পাথরের সঠিক রুপে কাটা, প্রতিটি ইটের পাকা-পোক্ত হওয়া, প্রতিটি কড়িকাঠের মজবুত হওয়া, কোথাও ঘুনে ধরা না লাগানো এবং কোথাও অপক্ক-নিকৃস্ট ও দুর্বল উপকরণ ব্যাবহার না করার ওপর। পঞ্চম প্রশ্ন এই যে, সে সংস্কৃতিতে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষে মানুষে কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়? তার আপন খান্দানের সঙ্গে, তার পাড়া-পড়শীর সঙ্গে, তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, তার সাথে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে, তার অধীনস্থ লোকদের সঙ্গে, তার উপরস্থ লোকদের সঙ্গে, তার নিজ সংস্কৃতি অনুসারীদের সঙ্গে এবং তার সংস্কৃতি বহির্ভূত লোকদের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক রাখা হয়েছে? অন্যান্য লোকদের ওপর তার কি অধিকার এবং তার ওপর অন্যান্য লোকদের কি অধিকার নির্দেশ করে দেয়া হয়েছে? তাকে কোন কোন সীমারেখার অধীন করে দেয়া হয়েছে? তাকে আজাদী হলে কতখানি আজাদী দেয়া হয়েছে আর বন্দী করা হলে কতদূর বন্দী করা হয়েছে? বস্তুত এ প্রশ্নগুলোর ভেতর নৈতিক চরিত্র, সামাজিকতা, আইন-কানুন, রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সকল বিষয়ই এসে যায়। আর আলোচ্য সংস্কৃতি কি ধরনের খান্দান, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে, তা এ থেকেই জানা যেতে পারে।

এ আলোচনা থেকে জানা গেছে যে, যে বস্তুটিকে সংস্কৃতি বলে অভিহিত করা হয়, তা গঠিত হয় পাঁচটি মৌলিক উপাদান দ্বারাঃ
(১) দুনিয়াবী জীবন সম্পর্কে ধারণা,
(২) জীবনের চরম লক্ষ্য,
(৩) বুনিয়াদীআকীদাওচিন্তাধারা
(৪) ব্যক্তিপ্রশিক্ষণ এবং
(৫) সমাজব্যবস্থা।

দুনিয়ার প্রত্যেক সংস্কৃতি এই পাঁচটি মৌলিক উপাদান দিয়েই গঠিত হয়েছে।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top