ইসলামের ইতিহাস: History of Islam PDF in Bangla

ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক বই

ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অভিশপ্ত ইহুদী জাতির বেঈমানীর ইতিহাস – এ. বি. এম. এ. খালেক মজুমদার
২। আজাদি আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা – জুলফিকার আহমদ কিসমতি
৩। অভিশপ্ত ইহুদী জাতির বেঈমানীর ইতিহাস – এ. বি. এম. এ. খালেক মজুমদার
৪। আজাদি আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা – জুলফিকার আহমদ কিসমতি
৫। আযাদী আন্দোলন ১৮৫৭ –  ফযলে হক খায়রাবাদী
৬। আযাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা – জুলফিকার আহমদ কিসমতি
৭। আরকানের মুসলমানদের ইতিহাস – ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ
৮। আরব জাতি ইসলামের পূর্বে ও পরে – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯। আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে হিট্টি
১০। আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা – মাহমুদ শীছ খাত্তাব
১১। আল আকসা মসজিদের ইতিকথা – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
১৩। আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস – আবদুস সাত্তার
১৪। আসামের ইতিহাস – যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
১৫। ইউরোপে ইসলামের আলো বসনিয়া হারজেগোভিনা  – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
১৬। ইতিহাস কথা কয় – আবুল হোসেন ভট্টাচার্য
১৭। ইতিহাস কথা কয় – মুহমদ আবূ তালিব
১৮। ইতিহাসে আলোকে শিয়াসুন্নী সহযোগিতা – শেখ নাসীর আহমদ
১৯। ইতিহাসে কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া রা. – মুহাম্মদ তাকি উসমানী
২০। ইতিহাসের অন্তরালে – ফারুক মাহমুদ
২১। ইতিহাসের অলি গলি – জিয়াউল হক
২২। ইতিহাসের আলোকে আমাদের শিক্ষার ঐতিহ্য ও প্রকৃতি – মুহাম্মদ আলমগীর
২৩। ইতিহাসের আলোকে দেশ বিভাগ ও কায়েদে আযম জিন্নাহ – এম. এ. মোহাইমেন
২৪। ইতিহাসের ইতিহাস – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
২৫। ইতিহাসের কান্না – খাজা হাসান নিজামী
২৬। ইতিহাসের জানালা – সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
২৭। ইতিহাসের দুর্লভ তথ্যাবলী – মুহাম্মদ গোফরান রশীদি কিরানভী
২৮। ইতিহাসের পাতা  – ইমরান রাইহান
২৯। ইতিহাসের শাস্তি – এম এ ওয়াহিদ
৩০। ইসলামের ইতিহাস – আকবর শাহ খান নজীবাবাদী
৩১। ইসলামের ঐতিহাসিক ভুমিকা – এম. এন. রায়
৩২। উত্তর আফ্রিকা ও মিশরে ফাতেমিয়দের ইতিহাস – এ এইচ এম শামসুর রহমান
৩৩। উপমহাদেশর স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুসলমান ২ – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
৩৪। উপমহাদেশে ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামের সূচনায় উলামায়ে কেরাম – আবদুল মান্নান তালিব
৩৫। উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস – মাসউদ আলম নদভী
৩৬। উপমহাদেশের অতীত রাজনীতির খণ্ড চিত্র – এ কে এম নাজির আহমদ
৩৭। উপমহাদেশের আলিম সমাজের বিপ্লবী ঐতিহ্য – মুহাম্মদ মিয়াঁ
৩৮। উসমানী খেলাফতের ইতিকথা – এ কে এম নাজির আহমদ
৩৯। উহুদের যুদ্ধ – ইবনে হিশাম
৪০। এ এক অন্য ইতিহাস ১ম খণ্ড – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
৪১। এ এক অন্য ইতিহাস ২য় খণ্ড – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
৪২। এ ওয়ার্ল্ড উইদাউট ইসলাম – গ্রাহাম ই ফুলার
৪৩। একশো বছরের রাজনীতি – আবুল আসাদ
৪৪। একাত্তরের স্মৃতি – ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন
৪৫। একুশ শতকের এজেন্ডা – আবুল আসাদ
৪৬। কাশ্মীর ইতিহাস ও রাজনীতি – জাকারিয়া পলাশ
৪৭। কাশ্মীর কুসুম – শ্রী রাজেন্দ্র মোহন বসু
৪৮। কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি এতিহাসিক দলিল – প্রবীর ঘোষ
৪৯। কি হয়েছিল অবাধ্যদের – মােহাম্মদ জুলকারনাইন
৫০। কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইসরাঈল – হাবিবুর রহমান
৫১। চেতনার বালাকোট – শেখ জেবুল আমিন দুলাল
৫২। চেপে রাখা ইতিহাস – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
৫৩। জেরুজালেম ইতিহাস – সাইমন সেবাগ মন্টেফিওরি
৫৪। জেরুজালেম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের ইতিহাস – শেখ আবদুল জব্বার
৫৫। জেরুসালেম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের ইতিহাস – শেখ আবদুল জব্বার
৫৬। তাতারীদের ইতিহাস – ড. রাগেব সারজানী
৫৭। ফাউন্ডেশন অব ইসলাম – বেঞ্জামিন ওয়াকার
৫৮। ফাতেহনামা – মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
৫৯। ফুতূহুল বুলদান – ইয়াহইয়া বালাযুরী
৬০। বর্জকলম – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
৬১। বাঙলা প্রহসনের আলোকে উনিশ শতকের বাঙলা ও বাঙালী সমাজ – মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন
৬২। বাঙালীর ইতিহাস আদিপর্ব – নীহার রঞ্জন রায়
৬৩। বাজেয়াপ্ত ইতিহাস – গোলাম আহমাদ মোর্তজা
৬৪। বাবরি মসজিদ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ – আব্দুস সামাদ চৌধুরী
৬৫। বায়‘আত মাসজিদ – একদল বিজ্ঞ আলেম
৬৭। বায়তুল মোকাদ্দসের ইতিহাস – শপখ আব্দুল জব্বার
৬৮। বাংলা যেভাবে ভাগ হল – মুহাম্মদ আসাদ
৬৯। বাংলার মুসলমানের ইতিহাস ১ম ও ২য় খণ্ড – আব্বাস আলী খান
৭০। বাংলার মুসলামানদের স্বাধীনতার সংগ্রামের ঐতিহাসিক দলিল – মুহাম্মদ সিরাজ মান্নান
৭১। বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা – সত্যেন সেন
৭২। ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৭৩। ভারতে মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস – মুহাম্মদ কাসিম ফিরিশতা
৭৪। ভূ- স্বর্গে বিদ্রোহ – মুহাম্মদ ফারুকে আজম
৭৫। মক্কা শরীফের ইতিহাস – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
৭৬। মদিনা শরীফের ইতিকথা – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
৭৭। মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ – আবদুল মওদুদ
৭৮। মানুষের ইতিহাস প্রাচীন যুগ – আব্দুল হালিম ও নুরুন নাহার বেগম
৭৯। মানুষের ইতিহাস মধ্যযুগ – আব্দুল হালিম ও নুরুন নাহার বেগম
৮০। মানুষের ইতিহাস আধুনিক ইউরোপ – আব্দুল হালিম ও নুরুন নাহার বেগম
৮১। মুসলমানদের ইতিহাস চর্চা – মাহবুবুর রহমান
৮২। মুসলিম কীর্তি – ডঃ এম আবদুল কাদের
৮৩। মুসলিম জনগনের শত্রুর স্বরূপ – গ্রিগোরী
৮৪। মুসলিম বাংলার অভ্যুদয় – মাহবুবুর রহমান
৮৫। মুসলিম স্পেনের রাজনৈতিক ইতিহাস – এস. এম. ইমামউদ্দিন
৮৬। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব – মোহাম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস
৮৭। মোগল সাম্রাজ্য পতনের ইতিহাস – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
৮৮। মোগল সাম্রাজ্যের পথে পথে – এনায়েত রসুল
৮৯। মোগল হারেম ইতিহাস ও ঐতিহ্য – মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব
৯০। রক্ত ঝরছে আরকানে – আতিক উল্যাহ জুলফিকার
৯১। রক্ত ভেজা গুজরাট – উবায়দুর রহমান খান নদভী
৯২। রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস – এন. এম. হাবিব উল্লাহ
৯৩। রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ – ড. মাহফুজুর রহমান
৯৩। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ১ম খণ্ড — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯৩। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ২য় খণ্ড — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯৩। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৩য় খণ্ড — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯৩। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৪র্থ খণ্ড — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯৩। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৫ম খণ্ড — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
৯৫। সুলতানী আমলে মুসলিম স্থাপত্যের বিকাশ – ড. মুহাম্মদ মোখলেছুর রহমান
৯৬। সোনালী যুগের মুসলিম নৌশক্তি – আবদুল ওয়াহেদ সিন্ধি
৯৭। স্পেনে মুসলমানদের ইতিহাস – ড. এম. শামসুর রহমান
৯৮। স্পেনে মুসলমানদের উথান ও পতন – অধ্যাপক ফজলুর রহমান
৯৯। স্পেনের কান্না – মুফতী তাকি উসমানী
১০০। হারিয়ে যাওয়া হায়দারাবাদ – আবদুল হাই শিকদার
১০১। হিজরি সনের ইতিকথা – সুনির্মল কুমার দেব
১০২। হিন্দু মুসলিম মানস – আবুল আসাদ

ইসলামের ইতিহাস পরিচিতিঃ ইতিহাস একগুচ্ছ অতীত। কাল-মহাকালে মানবসভ্যতার গতিপ্রবাহের সরল বয়ান। বিগত পৃথিবীর নানা ঘটনাপ্রবাহের ধারাক্রম। ইতিহাস মানুষকে হাত ধরে নিয়ে যায় দূর অতীতে। ভাঙা-গড়ার বহু ঘটনার মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়। মেলে ধরে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর লুপ্ত-অবলুপ্ত নানা দৃশ্যপট। উত্থান-পতনের নির্মম পালাবদল, জয়-পরাজয়ের অসীম ঘূর্ণায়ন, চেষ্টা-পরিশ্রমের উত্তাল তরঙ্গায়ন আর স্বপ্ন-স্বাধের আকাশছোঁয়া সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায় ঢাকা অকাল সমাধির নানা উপাখ্যান ছড়িয়ে থাকে ইতিহাসের ভাঁজে ভাঁজে। ইতিহাস এক আলোক মিনার, যা যুগ ধরে আলো বিলায়। দিশা দেয় পথচলার, ইঙ্গিত দিয়ে যায় সফল আগামীর।

ইতিহাস এক বিস্তীর্ণ পাঠ্যালয়। যেখানে ছড়িয়ে আছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু হীরকখণ্ড। থোকায় থোকায় সাজানো আছে প্রজ্ঞা-বিদ্যায় প্রস্ফুটিত হরেক পুষ্পমাল্য। যুগ-যুগান্তরে বিস্তৃত এ মহাজগতে ইতিহাসের সচেতন পাঠক খুঁজে পায় জীবনের অর্থ। অবাক চাহনিতে চষে বেড়াতে থাকে প্রান্ত থেকে প্রান্ত। আচল ভরে সংগ্রহ করে নেয় সফল আগামী বিনির্মাণের জাদুকরী উপায়-উপকরণ।

ইতিহাস মেলে ধরে আমাদের পূর্ব পুরুষদের জীবন্ত বিরত্ব গাথা। দিগ্বিজয়ের জ্বলন্ত আখ্যান। ইতিহাস আমাদের সুদিনের গল্প শোনায়। হৃদয়ে ঝড় তোলে। ঘুরে দাঁড়ানোর সবক দেয়। চাঁদ ছিঁড়ে আনা প্রত্যয়ের গর্জন তোলে। বারুদের গায়ে ঠুকে দেয় শাশ্বত চেতনার জ্বলন্ত শিখা।

ইতিহাস আমাদের চিৎকার করে বলে- তোমরা দাস নও, তোমরা বাদশাহ। তোমরা শাসিত নও, তোমরা শাসক। তোমরা ইতিহাসের নির্মাতা। তোমরা ইতিহাসের রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো সিংহ-শার্দূল। তোমরা সভ্যতার স্রষ্টা। তোমরা দূর্জেয় রোমণ্ডপারস্যের দম্ভ চূর্ণকারী। তোমরা মুহাম্মদি কাফেলা। বিশ্ব তোমাদের মাতৃভূমি।

ইতিহাস আমাদের গর্জে বলে- তোমরা ভিখারি নও। কালোত্তীর্ণ রাষ্ট্রনায়ক উমর ইবনুল খাত্তাব, দিগবিজয়ী খালিদ বিন ওয়ালিদ, মুসান্না বিন হারেসা, উকবা ইবনে নাফে, মুসা বিন নুসাইর, তারিক বিন জিয়াদ, মুহাম্মদ বিন কাসিম, সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী, মুহাম্মদ আল ফাতিহ, সমুদ্রের বাঘ খাইরুদ্দিন বারবারোসা তোমাদের। তোমরা দুঃসাহসী। তোমরা অপ্রতিরোধ্য। তোমরা কারো করুণার পাত্র নও। আজকের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তোমাদের থেকে ধার নেওয়া। চোখ ধাঁধানো আধুনিকায়নের নায়ক তোমরা, পেছনের গল্পটা তোমাদেরই।

জাবির ইবনে হাইয়্যান, আল খাওয়ারিজমী, আল ফাজারি, আল কিন্দী, আল ফারাবী, হাসান ইবনে হাইতাম, আল বেরুনী, ইবনে সিনা, উমর খৈয়াম, ইবনে রুশদ, আল জাযারী, ইবনে বতুতা, ইবনে খালদুন, হাসান চেলেবী তো তোমাদের। তাদের হাত ধরেই তো আজকের পৃথিবী উন্নতি-আধুনিকতার সবক নিয়েছে। গণিত, রসায়ন, দর্শন, চিকিৎসা, জ্যামিতি, মহাকাশবিজ্ঞান, পদার্থ-বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, পর্যটনশাস্ত্র, অর্থনীতি তো তোমাদের সম্পদ।

একটি জাতি তাদের ইতিহাসে চোখ রেখে এগিয়ে যায়। পূর্ব পুরুষদের জাগরণী ইতিহাসের সঞ্জীবনী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে ইতিহাসহারা জাতি নিজেরাই হারিয়ে যায়। ইতিহাসের অপরিণামদর্শী বিস্মৃতি জাতিকে পশ্চাৎপদ করে তোলে। হতাশা আর না পারার বেদনার দহনে জ্বলতে জ্বলতে এক সময় তারা পরিণত হয় উড়ন্ত ধূলিকণায়। ধীরে ধীরে ঠিকানাহীন বাতাসের তালে তালে তলিয়ে যায় কালের অতল গর্ভে। সম্ভাবনার পায়রাটি কাতরাতে কাতরাতে মুহূর্তে ঢলে পড়ে চিরনিদ্রায়। সোনালি দিগন্তের ঝলমলে আলোর আভাস উদ্ভাসিত হতে হতেই আঁধার কালো মেঘে ছেয়ে যায় সম্ভাবনার বিস্তীর্ণ আকাশ। যারা আগামীর পৃথিবীতে ইসলামকে নিয়ে স্বপ্ন আঁকে এবং ইতিহাসের বাগডোর নিজেদের হাতে রাখতে চায়, তাদের ইতিহাস অধ্যয়নের বিকল্প নেই। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে অতীতের বহু ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আল কোরআন ইতিহাসগ্রন্থ নয়, কিন্তু মানবজাতির উপদেশ হিসেবে ইতিহাসের নানা অংশ আল-কোরআন তুলে ধরেছে। মহান আল্লাহ ইতিহাস মন্থন করে শিক্ষা নেওয়া উপদেশ প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন- তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি ও দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? (সুরা মুমিন, আয়াত : ৮২)।

অন্যত্র বর্ণনা করা হয়েছে- রাসুলদের যেসব বৃত্তান্ত আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি, আমি তা দ্বারা আপনার হৃদয়কে সুদৃঢ় করি। এর মাধ্যমে আপনার কাছে সত্য এসেছে এবং মুমিনদের কাছে এসেছে উপদেশ ও সাবধানবাণী। (সুরা হুদ, আয়াত, ১২০)

আমাদের পূর্বসূরিরাও ইতিহাস অধ্যয়ন ও সংরক্ষণের ব্যাপারে জোরালো তাগিদ করেছেন। নিজেদের পঠন-পাঠনে ইতিহাসকে আমরণ জিইয়ে রেখেছেন। সন্তানদের সবক দিয়ে গিয়েছেন। বিখ্যাত সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর ছেলে মুহাম্মদ (রহ.)-এর পিতা সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণনা করছেন, বাবা আমাদের বিভিন্ন যুদ্ধ-জিহাদের বিষয় শিক্ষা দিতেন। বলতেন, এগুলো তোমাদের পূর্ব পুরুষদের মর্যাদার প্রতীক। তোমরা এ স্মরণীয় বিষয়গুলোকে বিনষ্ট হতে দিয়ো না। (সিরাতে হালাবিয়্যাহ : ২০৩/১)।

একই কথা ‘মুখতাসারু তারিখে দিমাশক’ নামক গ্রন্থেও উল্লেখ করা হয়েছে। (মুখতাসারু তারিখে দিমাশক: ২০৩/১)

নবি দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-এর পুত্র জাইনুল আবিদীন আলী (রহ.) বলেন, আমরা নবীজি (সা.)-এর জিহাদের ঘটনাগুলো কোরআনের কোনো সুরা শেখার মতো করে শিখে থাকি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২২৪/৩)

প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর দরসের পাঠ্যসূচির একটি অংশ ছিল নবীজি (সা.)-এর যুদ্ধ-জিহাদের ইতিহাস সম্পর্কে। ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বিশিষ্ট ছাত্র উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন- কোনো দিন তিনি (ইবনে আব্বাস রা.) ক্লাসে কেবল ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র), কোনো দিন তাফসির, কোনো দিন জিহাদের ইতিহাস, কোনো দিন কবিতা এবং কোনো দিন আরবের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করতেন। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ : ৩৬৮/২)

শুধু তাণ্ডই নয়, খেলাফতের স্বর্ণ সময়ে ইসলামের যুদ্ধ-জিহাদের ইতিহাস শিক্ষাদানের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হতো। হজরত কাতাদা ইবনে নু’মান (রা.)-এর নাতি হজরত আসেম ইবনে উমর (রহ.)-কে তৎকালীন খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) জামে মসজিদে ইসলামের যুদ্ধ-জিহাদের ইতিহাস এবং সাহাবিদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়োগ করেছিলেন। বিষয়টি হাদিসশাস্ত্রে বরিত ইমাম ইবনে হাজার (রহ.) এভাবে তুলে ধরেছেন- তিনি (আসেম ইবনে উমর) ইলমে দ্বীনের একজন বর্ণনাকারী ছিলেন। যুদ্ধ-জিহাদের ইতিহাস সম্পর্কে তার ভালো জানাশোনা ছিল। উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) দামেশকের কেন্দ্রীয় মসজিদে মানুষকে ইসলামের যুদ্ধ-জিহাদের ইতিহাস এবং সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা শিক্ষাদানের জন্য তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আর তিনি সে দায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়েছেন। (তাহজিবুত তাহজিব : ৪৮/৫)

ইতিহাস পাঠদানের সে ধারা আজ অবলুপ্ত। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার কথা তো বলাই বাহুল্য, ইসলামি শিক্ষাধারায়ও ইতিহাস বিষয়টি আজ চরমভাবে নিগৃহীত, উপেক্ষিত। তাই বর্তমান সাধারণ মুসলিম সমাজ তো বটেই ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিও আত্মবিস্মৃতির নির্মম শিকার। আজকের তরুণরা উমাইয়া, আব্বাসী, ফাতেমি খিলাফাহ সম্পর্কে জানে না। সেলজুক ও প্রতাপশালী উসমানী সাম্রাজ্যকে ওরা রূপকথার গল্প মনে করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানীখ্যাত স্পেন, বুখারা-সমরকন্দের ইতিহাস আজ শুধু বইয়ের পাতায়। সে বই কজন তরুণ আজ হাতে নেয়? আর আমরা কজনই বা তাদের হাতে তুলে দিই?

পাঠ্যসূচিতে মৌলিকভাবে উপমহাদেশের মোঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে শুধু আলোচনা করা হয়েছে। আর এটাকেই অনেকটা ইতিহাসের শেষপাঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ আমাদের ইতিহাসের কি বিশাল জগৎ অধরা রয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসের প্রতি এ অবিচারের ফলেই আজ আমাদের হাতে ইতিহাস সেভাবে নির্মিত হচ্ছে না। এ দায় আমাদের, এ দায় সবার। বিশেষত বোদ্ধা মহল কি এ দায় এড়াতে পারেন?

ইতিহাসের প্রতি এ অবজ্ঞার ফলে আজ আমাদের বারা ভাতে শকুনের দল ভাগ বসাচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে থালাটাও। আর আমরা চেয়ে দেখছি, বলার সাধ্য নেই। চেতনার ঘরে তালা লাগিয়ে আজ যখন আমরা উদাসীনতার ঘুমে বিভোর, তখন তারা তাবৎ বিশ্ব দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘুম পাড়ানির গান শুনিয়ে নিদ্রায় মগ্ন রেখে, আমাদের শাসনের ছড়ি হাতিয়ে ওরা আমাদেরই হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছে। লাঞ্ছনার তিলক এঁকে দিচ্ছে আমাদের দুর্ভাগা ললাটে। এ আলস্য নিদ্রার ভঙন কি কভু হবে?

ইসলামি বিশ্বের ইতিহাস তো এখন হাতের নাগালেই। ক্লিক পরিমাণ দূরত্বে ইতিহাসের কত ফিরিস্তি। কিন্তু আমাদের আগ্রহ নেই। ঘাড় ঘুরিয়ে নিজেদের পেছনটা একটু তলিয়ে দেখতে রাজি নই আমরা। প্রয়োজন সচেতনতার। নিজের। সবার। ইতিহাসের মনোযোগী পাঠই পারে আমাদের আবার রাজ আসনে সমাসীন করতে।

কবে আসবে সে ভোর, যে ভোরের রক্তিম সূর্যটা নতুন দিনের বার্তা নিয়ে হেসে উঠবে পুব দিগন্তে! আমরা আবার ইতিহাসের লাগাম টেনে ধরব! যাত্রা করব এক স্বপ্নের পৃথিবীর দিকে। মহামহিম প্রভুর সকাশে এ প্রত্যাশা।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top