হজ্ব ও কুরবানী বিষয়ক বই: Hajj and Qurbani Books

হজ্ব ও কুরবানী বিষয়ক বই

হজ্ব ও কুরবানী বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আপনার হজ্ব শুদ্ধ হচ্ছে কি – মুহাম্মদ নাসেরুদ্দিন আল-আলবানী
২। আহকামে হজ্জ উমরাহ – মুহম্মদ শফী উসমানী
৩। উমরায় করণীয় কাজসমূহ – মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
৪। উমরাহ ও হজ্জের বিধান – আব্দুল হামীদ আল ফাইযী
৫। উমরাহ করার নিয়ম – ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া
৬। উমরাহ নির্দেশিকা – আব্দুল হামীদ আল ফাইযী
৭। জাবালে ‘আরাফাঃ জাবালে রহমত – একদল বিজ্ঞ আলেম
৮। জিয়ারতে মক্কা মদীনা – সৈয়দ মবনু
৯। নবী সাঃ যেভাবে হজ্জ করেছেন – মুহাম্মদ নাসেরুদ্দিন আল আলবানী
১০। নারীর হজ্জ ও উমরাহ – ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া
১১। প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা – মোঃ নুরুল ইসলাম
১২। বৈধ অবৈধের মানদণ্ডে পবিত্র মক্কার বিভিন্ন স্থান সমূহের সম্মাননা – সাদ ইবন আলী আশ শাহরান
১৩। মদিনা শরীফের ফযিলত জিয়ারত ও অবস্থানকালীন আদব – আব্দুল মুহসিন বিন হামাদ
১৪। মাবরুর হজ্জ – মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু
১৫। যুল হজ্জের তেরো দিন – আব্দুল হামীদ আল ফাইযী
১৬। সংক্ষিপ্ত হজ্জ উমরা ও যিয়ারত – নুমান আবুল বাশার ও আলি হাসান তৈয়ব
১৭। সংক্ষিপ্ত হজ্জ, উমরা ও যিয়ারত গাইড – ড. মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
১৮। হজে প্রদত্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতাওয়া – সানাউল্লাহ নজির
১৯। হজের সাথে সংশ্লিষ্ট আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তিসমূহ – আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ
২০। হজ্জ উমরা ও মসজিদে রাসুল – হজ্জ বিষয়ক ইসলামী জ্ঞানদান সংস্থা
২১। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত – মুহাম্মদ নুমান আবুল বাশার
২২। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত – আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায
২৩। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত গাইড – ড. মনজুরে ইলাহীসহ অনেকে
২৪। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত গাইড – ড. মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
২৫। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারতে মদীনা – আবদুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
২৬। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারতের পদ্ধতি – ইসলামী গবেষণা পরিষদ
২৭। হজ্জ উমরাহ পালনকারীকে এতদুভয়ের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগতকরণ – শাইখ আব্দুল মুহাসিন
২৮। হজ্জ উমরাহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
২৯। হজ্জ ও উমরাহ – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
৩০। হজ্জ ও উমরা পালনকারীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা – ড. ইয়াহইয়া ইবন ইবরাহীম
৩১। হজ্জ ও ওমরাহ আদায়কারীর গাইড বুক – তালাল বিন আহমদ আল-আকীল
৩২। হজ্জ ও মাসায়েল – আল কারী শাঈদ আহমদ
৩৩। হজ্জ পালন অবস্থায় রাসুলুল্লাহ স. এর নান্দনিক আচরণ – ফায়সাল বিন আলী আল বাদানী
৩৪। হজ্জ সফরে সহজ গাইড – মোঃ মুশফিকুর রহমান
৩৫। হজ্জতুল্লাহিল বালিগাহ ১ম খণ্ড — শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী
৩৫। হজ্জতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খণ্ড — শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী
৩৬। হজ্জে প্রদত্ত নবী সাঃ এর ফাতওয়া – সাঈদ আব্দুল কাদির বাশানফার
৩৭। হজ্জে মাবরুর – মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু
৩৮। হজ্জের মর্মার্থ ও শিক্ষা – ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
৩৯। হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট আকীদাগর ভুলভ্রান্তি সমূহ – ড.আহমাদ ইবন উসমান আল মাযইয়াদ
৪০। হজ্জের হাকীকত – সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী
৪১। হজ্ব উমরা ও যিয়ারাত – আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায
৪২। হাকীকতে খানায়ে কাবা – রেদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী
৪৩। হারাম শরীফের দেশ ফযিলত ও আহকাম – ইসলাম প্রচার ব্যুরো রাবওয়া রিয়াদ
৪৪। হারামাইনের সেবায় সাউদী আরব – আবদুস শাকুর খন্দকার

কুরবানীঃ

১। আহকামে কুরবানি – মুফতি কামালুদ্দিন
২। কুরবানির ইতিহাস উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান – ড. মুহাম্মদ আবদুল কাদের
৩। কুরবানী ও আকীকাহ – মুহাম্মাদ বিলাল হুসাইন
৪। কুরবানী ও জাবীহুল্লাহ – ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
৫। কুরবানীর তাৎপর্য – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
৬। কুরবানীর বিধান – আব্দুল হামীদ আল মাদানী
৭। কুরবানীর শিক্ষা – খন্দকার আবুল খায়ের
৮। মাজার ও কবরের উদ্দেশ্য কুরবানি – সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান
৯। মাসায়েলে কুরবানি ও আকীকা – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
১০। মুকীম অবস্থায় শরীক কুরবানি বিষয়ে সমাধান – আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
১১। যিলহজ ঈদ ও কুরবানি – আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

হজ্জ পরিচিতঃ হজ্জের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছুকে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করার সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়া ভাষায় কাবা শরীফ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের ইচ্ছা বা সংকল্প করা।
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ। মহানবী (সঃ) বলেছেন; পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। তন্মধ্যে এবং আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা। (বুখারী ও মুসলিম)
হজ্জ বিত্ত্বশালী লোকদের জন্য একটি অন্যতম ইবাদত। মহান আল্লাহ বলেন; মানুষের মধ্যে যার কা’বা ঘরে যাওয়ার সামর্থ আছে তার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ। এতদ সত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জগতের কারো মুখাপেক্ষী নন। (আল ইমরান ৯৭) এ আয়াত দ্বারা বিত্ত্ববান লোকদের উপর হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং এ হজ্জকে অস্বীকার বা অমান্য করা কুফরী। হজ্জের সূচনা হয় হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সময় থেকে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর জেষ্ঠ্য ছেলে ইসমাঈলকে নিয়ে যখন কা’বা ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করলেন তখন মহান আল্লাহ তাঁকে বললেন, লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও। তারা যেন পায়ে হেটে কিংবা দূরবর্তী স্থান হতে উটে আরোহন করে তোমার নিকট চলে আসে। (সূরা হজ্জ ২৭) এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় হজ্জ প্রথা প্রথম শুরু হয়েছিল হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সময় থেকেই। সুতরাং হজ্জ বিত্ত্ববান লোকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শুধু ইবাদতই নয় ইহা বিশ্ব মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অন্যতম ও প্রধান পন্থাও বটে। তাই হজ্জকে বলা যায় মুসলিম উম্মাহর মহা ঐক্যের মহা সম্মেলন বা মহা ঐক্যের মহামিলন কেন্দ্র।

আমাদের দেশে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত সবচেয়ে বেশী অবহেলিত আর এ দু’টি ইবাদত ফরজ করা হয়েছিল বিত্ত্ববান লোকদের উপর। একটি যাকাত আর অপরটি হজ্জ। প্রকৃত যাকাত ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। মহানবী (সঃ) যেভাবে এবং যে পরিমাণ যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে যাকাত আদায় করার প্রচলন আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশে অধিকাংশ বিত্ত্ববান লোকেরা যাকাত আদায় করে না। আর যারা আদায় করেন তাদের অধিকাংশ লোকই সঠিক পরিমাণে যাকাত আদায় করেন না। যা আদায় করা হয় তা দায় সারা গোচের বা লোক দেখানো মাত্র। হজ্জের ব্যাপারেও ঠিক একই অবস্থা। যাদের উপর হজ্জ ফরজ তাদের অধিকাংশ লোক হজ্জ পালন করেন না। যারা পালন করেন তাদের অধিকাংশ লোকই তা সঠিক সময়ে আদায় করেন না। শারীরিকভাবে যখন সে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন হজ্জের নিয়ত করে, আবার অনেকে শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্জ করান, এর কোনটিই ছুন্নাহ বা সঠিক পন্থা নয়। মহানবী (সঃ) তাদের জন্য বদলী হজ্জে বিধান রেখেছেন যারা বৃদ্ধ অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন কিন্তু আর্থিকভাবে সে সচ্ছল। অথবা এমন সময় সে সম্পদের মালিক হয়েছেন যখন তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। এ ব্যাপারে হযরত লাকীত ইবনে আমীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি একদা মহানবী (সঃ) এর নিকট এসে বললেন; হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর পক্ষে হজ্জ এবং উমরাহ করার এবং এজন্য সফর করার ক্ষমতা নেই। তখন মহানবী (সঃ) তাকে বললেন তুমি নিজে তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরাহ কর। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)
এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আরো একটি হাদীস বর্ণিত আছে। যখন হজ্জ ফরজ হয় তখন জনৈক মহিলা এসে মহানবী (সঃ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। কিন্তু আমি দেখছি আমার পিতা অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তিনি সওয়ারীর পিঠে বসতে সমর্থ নন। তাঁর পক্ষ থেকে কি আমি হজ্জ করতে পারি? মহানবী (সঃ) জবাব দিলেন হ্যাঁ করতে পার। (আবু দাউদ ও তিরমিযী) হজ্জ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা পালন করার নির্দেশ: মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন সুতরাং তোমরা হজ্জ কর। (মুনতাকী) তা ছাড়া সঠিক সময়ে হজ্জ পালন না করা কুফরী। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ পালনে বিরত থাকে মহানবী (সঃ) তাদেরকে ইহুদী নাসারাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পাথেয় এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ আদায় না করে আর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে তার মৃত্যু ইহুদী নাসারার মত। (তিরমিযী)

হজ্জের ফযীলত:
* হজ্জ জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রান: মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন অন্য কোন দিনে এত লোককে মুক্তি দেন না। (মুসলিম)
* হজ্জ পালনকারী সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়: হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন; আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং হজ্জকালে যৌন সম্ভোগ ও কোন পাপাচারী কাজে লিপ্ত হয় না। সে ব্যক্তি সদ্য মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট শিশুরমত নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
* হজ্জের এক মাত্র প্রতিদান জান্নাত: হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত; মহানবী (সঃ) বলেন; এক উমরাহ হতে অন্য উমরাহ অন্তরবর্তী কালীন সময় গুনাহের কাফ্ফারা হয়। আর মাবরূর (গৃহীত ) হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম) হজ্জের তাৎপর্য হজ্জের এ রুহ বা হাকীকত নিুবর্ণিত পয়েন্টসমূহ থেকে অনুধাবন করা সম্ভব

১. এহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে হজ্জের সফরে রওয়ানা হওয়া কাফন পরে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

২. এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাব্বাইক’ বলা সমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে এহরামের কাপড়ের মতো স্বচ্ছ-সাদা হৃদয় নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।

৩. ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে বান্দা আল্লাহর যে কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে সদা প্রস্তুত থাকার কথা ঘোষণা দেয়।

৪. এহরাম অবস্থায় সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলা স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে মুমিনের জীবন বল্গাহীন নয়। মুমিনের জীবন আল্লাহর রশিতে বাঁধা। আল্লাহ যেদিকে টান দেন সে সেদিকে যেতে প্রস্তুত। এমনকী যদি তিনি স্বাভাবিক পোশাক- আশাক থেকে বারণ করেন, প্রসাধনী আতর স্নো ব্যবহার, স্বামী-স্ত্রীর সাথে বিনোদন নিষেধ করে দেন, তবে সে তৎক্ষণাৎ বিরত হয়ে যায় এসব থেকে। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে বৈধ এমনকী অতি প্রয়োজনীয় জিনিসকেও ছেড়ে দিতে সে ইতস্তত বোধ করে না বিন্দুমাত্র।

৫. এহরাম অবস্থায় ঝগড়া করা নিষেধ। এর অর্থ মুমিন ঝগড়াটে মেজাজের হয় না। মুমিন ক্ষমা ও ধৈর্যের উদাহরণ স্থাপন করে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে। মুমিন শান্তিপ্রিয়। ঝগড়া-বিবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সে পবিত্র ও সহনশীল জীবন যাপনে অভ্যস্ত।

৬. বায়তুল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে মুমিন নিরাপত্তা অনুভব করে। কেননা বায়তুল্লাহকে নিরাপত্তার নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তদ্রƒপভাবে শিরকমুক্ত ঈমানী জীবযাপনের দীর্ঘ চেষ্টা-সাধনার পর মুমিন আল্লাহর কাছে গিয়ে যে নিরাপত্তা পাবে তার প্রাথমিক উদাহরণ এটি।

৭. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ মুমিনের হৃদয়ে সুন্নতের তাজিম-সম্মান বিষয়ে চেতনা সৃষ্টি করে। কেননা নিছক পাথরকে চুম্বন করার মাহাত্ব কী তা আমাদের বুঝের আওতার বাইরে। তবুও আমরা চুম্বন করি, যেহেতু রাসূল (সঃ) করেছেন। বুঝে আসুক না আসুক কেবল রাসূল (সঃ) এর অনুসরণের জন্যই আমরা চুম্বন করে থাকি হাজরে আসওয়াদ। এ চুম্বন বিনা-শর্তে রাসূল (সঃ) এর আনুগত্যে নিজেকে আরোপিত করার একটি আলামত। ওমর (রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার পূর্বে বলেছেন, ‘আমি জানি নিশ্চয়ই তুমি একটি পাথর। ক্ষতি-উপকার কোনোটারই তোমার ক্ষমতা নেই। রাসূল (সঃ) কে চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। হাজরে আসওয়াদের চুম্বন নিয়ে, যুক্তির পেছনে না ঘুরে, আল্লাহ ও রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্যের চেতনা শেখায় যা ধর্মীয় নীতি-আদর্শের আওতায় জীবনযাপনকে করে দেয় সহজ, সাবলীল।

৮. তাওয়াফ আল্লাহ-কেন্দ্রিক জীবনের নিরন্তর সাধনাকে বুঝায়। অর্থাৎ একজন মুমিনের জীবন আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এক আল্লাহকে সকল কাজের কেন্দ্র বানিয়ে যাপিত হয় মুমিনের সমগ্র জীবন। বায়তুল্লাহর চার পাশে ঘোরা আল্লাহর মহান নিদর্শনের চার পাশে ঘোরা। তাওহীদের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের চার পাশে ঘোরা। তাওহীদনির্ভর জীবনযাপনের গভীর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা। আর সাত চক্কর চূড়ান্ত পর্যায়কে বুঝায়। অর্থাৎ মুমিন তার জীবনের একাংশ তাওহীদের চার পাশে ঘূর্ণায়মান রাখবে আর বাকি অংশ ঘোরাবে অন্য মেরুকে কেন্দ্র করে, এরূপ নয়। মুমিনের শরীর ও আত্মা, অন্তর-বহির সমগ্রটাই ঘোরে একমাত্র আল্লাহকে কেন্দ্র করে যা পবিত্র কুরআনে ‘পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।

৯. আল্লাহ তা’আলা নারীকে করেছেন সম্মানিতা। সাফা মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর, আল্লাহর রহমত-মদদ কামনায় একজন নারীর সীমাহীন মেহনত, দৌড়ঝাঁপকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যে শ্রম-মেহনতের পর প্রবাহ পেয়েছিল রহমতের ফোয়ারা ‘যমযম’। সাত চক্করে সম্পূর্ণ করতে হয় সাঈ যা, স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহর রহমত-সাহায্য পেতে হলে সাত চক্কর অর্থাৎ প্রচুর চেষ্টা মেহনতের প্রয়োজন রয়েছে। মা হাজেরার মতো গুটি গুটি পাথর বিছানো পথে সাফা থেকে মারওয়া, মারওয়া থেকে সাফায় দৌড়ঝাঁপের প্রয়োজন আছে। পাথুরে পথে সাত চক্কর, তথা প্রচুর মেহনত ব্যতীত দুনিয়া- আখেরাতের কোনো কিছুই লাভ হবার মতো নয় এ বিধানটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় পরিষ্কারভাবে।

১০. উকুফে আরাফা কিয়ামতের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে। যেখানে বস্ত্রহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে গুণতে হবে অপেক্ষার প্রহর। সঠিক ঈমান ও আমলের অধিকারী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাবে আল্লাহর করুণায়। আর ঈমানহীন-ত্রুটিপূর্ণ ঈমান ও আমলওয়ালা ব্যক্তিদেরকে অনন্ত আযাব ভোগ করাতে শেকল পরিয়ে ধেয়ে নেয়া হবে জাহান্নামের পথে। সুতরাং প্রতিটি সামর্থবান মুসলমানদের হজ্জ ফরজ হওয়ার পর যথা শ্রীঘ্র তা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। যথা সময়ে পালন না করা কুফরীর মত পাপ, পরিণামে জাহান্নাম। আর যথা সময়ে এবং সঠিকভাবে আদায় করলে তার বিনিময় এক মাত্র জান্নাত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সঠিকভাবে যথা সময়ে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top