ইমাম ইবনুল কাইয়ুম: Imam Ibn al-Qayyim Books

Imam Ibn al-Qayyim Books

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আন্তরিক তাওব
২। আযকারে মাসনূনাহ
৩। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের ১০ উপায়
৪। আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামায পড়তেন
৫। মুখতাসার যাদুল মা আদ
৬। যাদুল মাআদ ১ম খণ্ড
৭। রূহের রহস্য

লেখক পরিচিতিঃ

জন্ম, প্রতিপালন ও শিক্ষা গ্রহণঃ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) ৬৯১ হিজরী সালের সফর মাসের ৭ তারিখে দামেস্কে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এক ইলমী পরিবেশ ও ভদ্র পরিবারে প্রতিপালিত হন। মাদরাসাতুল জাওযীয়ায় তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পান্ডিত্য অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি স্বীয় যামানার অন্যান্য আলেমে দ্বীন থেকেও জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর উস্তদগণের মধ্যে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া (রঃ) সর্বাধিক উল্লেখ্য। ইবনে তাইমীয়া (রঃ)এর ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র ইবনুল কাইয়্যিমই ছিলেন তাঁর জীবনের সার্বক্ষণিক সাথী। ঐতিহাসিকদের ঐক্যমতে তিনি ৭১২ হিজরী সালে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়ার সাথে সাক্ষাত করেন। এর পর থেকে শাইখের মৃত্যুর পূর্ব পর্যমত্ম তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন। এমনকি জিহাদের ময়দান থেকে শুরম্ন করে জেলখানাতেও তিনি তাঁর থেকে আলাদা হন নি। এভাবে দীর্ঘ দিন স্বীয় উসস্তাদের সাহচর্যে থেকে যোগ্য উসস্তাদের যোগ্য শিষ্য এবং শাইখের ইলম এবং দারস-তাদরীসের সঠিক ওয়ারিছ হিসাবে গড়ে উঠেন। সেই সাথে স্বীয় পান্ডিত্য বলে এক অভিনব পদ্ধতিতে ইসলামী আকীদাহ ও তাওহীদের ব্যাখ্যা দানে পারদর্শীতা লাভ করেন।

তাঁর সম্পর্কে বলা হয় যে, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া (রঃ) -এর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে তিনি সুফীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। অতঃপর শাইখের সাহচর্য পেয়ে এবং তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি সুফীবাদ বর্জন করেন এবং তাওবা করে হেদায়াতের পথে চলে আসেন। তবে এ তথ্যটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয় বলে কতিপয় আলেম উল্লেখ করেছেন। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, তিনি প্রথম জীবনে সুফী তরীকার অনুসারী ছিলেন, তবে এমনটি নয় যে, তিনি বর্তমান কালের পঁচা, নিকৃষ্ট ও শির্ক-বিদআতে পরিপূর্ণ সুফীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন; বরং তিনি পূর্ব কালের সেই সমস্ত সম্মানিত মনীষির পথ অনুসরণ করতেন, যারা পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাস বর্জন করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য আত্মশুদ্ধি, উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন, এবাদত-বন্দেগী ও যিকির-আযকারে মশগুল থাকতেন এবং সহজ-সরল ও সাধারণ জীবন যাপন করতেন। আর এটি কোন দোষণীয় বিষয় নয়।

আল্লামা ইবনে তাইমীয়ার পর ইবনুল কাইয়্যিমের মত দ্বিতীয় কোন মুহাক্কিক আলেম পৃথিবীতে আগমণ করেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়না। তিনি ছিলেন তাফসীর শাস্ত্রে বিশেষ পান্ডিত্যের অধিকারী, উসূলে দ্বীন তথা আকীদাহর বিষয়ে পর্বত সদৃশ, হাদীছ ও ফিকহ্ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং নুসূসে শরঈয়া থেকে বিভিন্ন হুকুম-আহকাম বের করার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয়।
সুতরাং একদিকে তিনি যেমন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমীয়ার ইলমী খিদমাতসমূহকে একত্রিত করেছেন, এগুলোর অসাধারণ প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছেন, শাইখের দাওয়াত ও জিহাদের সমর্থন করেছেন, তাঁর দাওয়াতের বিরোধীদের জবাব দিয়েছেন এবং তাঁর ফতোয়া ও মাসায়েলের সাথে কুরআন ও সুন্নাহ্ -এর দলীল যুক্ত করেছেন, সেই সাথে তিনি নিজেও এক বিরাট ইলমী খেদমত মুসলিম জাতিকে উপহার দিয়েছেন।

ডাক্তারী বিজ্ঞানের আলেমগণ বলেন, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) তাঁর লিখিত কিতাব ‘তিবেব নববী’তে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে সমস্ত বিরল অভিজ্ঞতা ও উপকারী তথ্য পেশ করেছেন এবং চিকিৎসা জগতে যে সমস্ত বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন, তা চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে চিরকাল অমস্নান হয়ে থাকবে। তিনি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার হিসাবেও পারদর্শীতা অর্জন করেছিলেন।
কাযী বুরহান উদ্দীন বলেন, আকাশের নীচে তার চেয়ে অধিক প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী সে সময় অন্য কেউ ছিল না। ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) -এর কিতাবগুলো পাঠ করলে ইসলামের সকল বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। আরবী ভাষা জ্ঞানে ও শব্দ প্রয়োগে তিনি অত্যমত্ম নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন। তার লেখনীর ভাষা খুব সহজ। তাঁর উসস্তাদের কিছু কিছু লিখা বুঝতে অসুবিধা হলেও তাঁর কিতাবসমূহের ভাষা খুব সহজ ও বোধগম্য।
তার অধিকাংশ কিতাবেই দ্বীনের মৌলিক বিষয় তথা আকীদাহ ও তাওহীদের বিষয়টি অতি সাবলীল, প্রাঞ্জল ও চিত্তাকর্ষক ভাষায় ফুটে উঠেছে। সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালবাসা। বিদআত ও বিদআতীদের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন স্বীয় উসস্তাদের মতই অত্যমত্ম কঠোর। লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সুন্নাত বিরোধী কথা ও আমলের মূলোৎপাটনে তিনি তাঁর সর্বোচ্চ সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেন নি। তাওহীদের উপর তিনি মজবুত ও একনিষ্ঠ থাকার কারণে এবং শির্ক ও বিদআতের জোরালো প্রতিবাদের কারণে তাঁর শত্রুরা তাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে। তাকে গৃহবন্দী, দেশামত্মর এবং জেলখানায় ঢুকানোসহ বিভিন্ন প্রকার মসীবতে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এত নির্যাতনের পরও তিনি স্বীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়ান নি।

কর্মজীবনঃ জওযীয়া নামক মহল্লার ইমামতি, শিক্ষকতা, ফতোয়া দান, দাওয়াতে দ্বীনের প্রচার ও প্রসার ঘটানো এবং লেখালেখির মাধ্যমেই তিনি তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। যে সমস্ত মাসআলার কারণে তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন, তার মধ্যে এক সাথে তিন তালাকের মাসআলা, আল্লাহর নবী ইবরাহীম খলীল (আঃ) -এর কবরে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করার মাসআলা এবং শাফাআত এবং নবী-রাসূলদের উসীলার মাসআলা অন্যতম। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর উপর রহম করম্নন। এটিই নবী-রাসূলের পথ। যে মুসলিম আল্লাহর পথে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তাঁর জেনে রাখা উচিৎ যে, তিনি ইমামুল মুওয়াহ্হিদীন ইবরাহীম খলীল (আঃ) এবং বনী আদমের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পথেই রয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর জন্য তিনি অক্লামত্ম পরিশ্রম করে বিশাল দ্বীনি খেদমত রেখে গেছেন। তাঁর রচিত কিতাব গুলি হল;

রচনাবলীঃ

  • আস্ সাওয়ায়েকুল মুরসালাহ
  • যাদুল মাআদ ফী হাদ্য়ী খাইরিল ইবাদ
  • মিফতাহু দারিস সাআদাহ
  • মাদারিজুস্ সালিকীন
  • আল-কাফীয়াতুশ শাফিয়া ফীন্ নাহু
  • আল-কাফীয়াতুশ শাফীয়া ফীল ইনতিসার লিলফিরকাতিন নাজীয়াহ
  • আল-কালিমুত তায়্যিবু ওয়াল আমালুস সালিহু
  • আল-কালামু আলা মাসআলাতিস্ সামাঈ
  • হিদায়াতুল হায়ারা ফী আজভিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান্ নাসারা
  • আলমানারম্নল মুনীফ ফীস্ সহীহ ওয়ায্ যঈফ
  • ইলামুল মআক্কিয়ীন
  • আল-ফুরম্নসীয়াহ
  • তরীকুল হিজরাতাইন ও বাবুস্ সাআদাতাইন
  • আত্ তুরম্নকুল হুকামিয়াহ
  • আল-ফাওয়ায়েদ
  • হাদীল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ
  • আল-ওয়াবিলুস্ সাইয়্যিব
  • উদ্দাতুস সাবিরীন ও যাখীরাতুশ্ শাকিরীন
  • তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ
  • আস্ সিরাতুল মুসতাকীম
  • শিফাউল আলীল
  • কিতাবুর রূহ্

এ ছাড়াও তাঁর আরও কিতাব রয়েছে, যা এখনও আমাদের নযরে পড়ে নি।

মৃত্যুঃ মুসলিম উম্মার জন্য অসাধারণ ইলমী খেদমত রেখে এবং ইসলামী লাইব্রেরীর বিরাট এক অংশ দখল করে হিজরী ৭৫১ সালের রজব মাসের ১৩ তারিখে এই মহা মনীষী এ নশ্বর ইহধাম ত্যাগ করেন। দামেস্কের বাবে সাগীরের গোরস্থানে তাঁর পিতার পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। হে আল্লাহ্! তুমি তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান কর এবং তোমার রহমত দিয়ে তাঁকে ঘিরে নাও। আমীন!

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top